বোলিং নিয়ন্ত্রিত রেখে দিল্লি ক্যাপিটালসকে অল্পে ঠেকিয়ে রেখে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যে রেখেছিলেন সাকিব-নারাইনরা। পরে ব্যাট হাতে দুজন ওপেনার উত্তেজনাময় শুরু এনে দিলেও শেষদিকে টানা উইকেট পতনের পর ম্যাচটা প্রায় হাত থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এই জয়ে আইপিএলের ফাইনালে পৌঁছে গেল মরগ্যানবাহিনী। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার (১৩ অক্টোবর) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দিল্লিকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে কলকাতা। শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় দিল্লি। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে ১ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় কলকাতা।
টসে জিতে দিল্লিকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় কলকাতা। শুরুতেই সাকিবের হাতে বল তুলে দেন কেকেআর অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। ওই ওভারে মাত্র ১ রান খরচ করেন বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার। অবশ্য নিজের পরের ওভারে এক ছক্কা ও এক বাউন্ডারিসহ ১২ রান হজম করেন তিনি।
দিল্লির দুই ওপেনিং ব্যাটার যখন উইকেটে থিতু হওয়ার পথে, ঠিক তখন (সপ্তম ওভারে) ফের সাকিবের হাতে বল তুলে দেন মরগ্যান। ওভারের দ্বিতীয় বলেই দিল্লি ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে এগিয়ে আসতে দেখে লেগ সাইডের বাইরে বল করেন সাকিব। বলের লাইন মিস করে ধাওয়ান পরাস্তও হন, কিন্তু উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিক স্টাম্পিং করতে ব্যর্থ হন। ওই ওভারে আসে ১১ রান। নিজের শেষ ওভারে অবশ্য মাত্র ৪ রান খরচ করেন সাকিব।
ব্যাট হাতে দিল্লির ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে ধাওয়ানের ব্যাট থেকে। তবে তিনি বল খেলেন ৩৯টি। এছাড়া শ্রেয়াস আইয়ার অপরাজিত থাকেন ৩০ রানে। শেষদিকে ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলে দলের রান সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যান শিমরন হেটমায়ার। আর ওপেনার পৃথ্বী শ এবং মার্কাস স্টয়নিসের ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান করে।
সাকিব বল হাতে উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে খরচ করেন ২৮ রান। কলকাতার ৫ বোলারই ৪ ওভারের কোটা পূর্ণ করলেও সবাই ৩০-এর নিচে রান খরচ করেছেন। এর মধ্যে বরুণ চক্রবর্তী ২টি এবং লোকি ফার্গুসন ও শিভম মাভি ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
দিল্লির ছুড়ে দেওয়া ১৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কলকাতার উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৯৬ রান। দারুণ এই জুটি ভাঙে কাগিসো রাবাদার দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারে। বিদায়ের আগে ৪১ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন কলকাতার ওপেনার ভেঙ্কটেশ আইয়ার। এরপর তিনে নামা নিতীশ রানা ১২ বলে ১৩ রানের ইনিংস খেলে এনরিচ নরকিয়ার শিকার হন।
শেষ ৪ ওভারে কলকাতার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১৩ রান। ক্রিজে তখনও বহাল তবিয়তে ছিলেন ওপেনার শুভমান গিল। দুর্দান্ত খেলতে থাকা এই ব্যাটার ছুটছিলেন ফিফটির পথে। কিন্তু মাত্র ২ রান যোগ হতেই আভেশ খানের শিকার হন গিল। দলকে জয় থেকে মাত্র ১১ রান দূরত্বে রেখে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৬ বলে ঠিক ৪৬ রান।
গিল বিদায়ের নেওয়ার পর কলকাতার ব্যাটিং লাইনআপে রীতিমত ধস নামে। ১২৬ থেকে ১৩০ রানের মধ্যে আরও ৪ উইকেট হারিয়ে বসে দলটি। দীনেশ কার্তিক, মরগ্যান, সাকিব ও সুনীল নারাইন কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি।
শেষ ওভারে কলকাতার দরকার ছিল মাত্র ৭ রান। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের করা ওই ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে ক্রিজে নতুন আসা সাকিবকে স্ট্রাইক দেন রাহুল ত্রিপাঠী। কিন্তু মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে কোনো রান না নিতে পারা এই বাঁহাতি ব্যাটার পরের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। পরের বলেই ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন নারাইন। কিন্তু পঞ্চম বলে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে সব অনিশ্চয়তা দূর করে দেন ত্রিপাঠী (১২*)।
আগামী ১৫ অক্টোবর চলতি আইপিএলের ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের মুখোমুখি হবে কলকাতা।