ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী নৌকা ডুবে গেছে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ আছেন। আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক।
শুক্রবার বিকাল ৬টার দিকে উপজেলার লইসকা বিলে এ ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকাটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন- মোমেনা বেগম (৫৫),কাজলা বেগম, তাসফিয়া মিম (১২),তানভীর (৮),তাকুয়া (৮), সাজিম (৭), শারমিন (১৮),আরিফ বিল্লাহ (২০),মঞ্জু বেগম (৬০),ফরিদা বেগম (৪৭) এবং তাঁর মেয়ে মুন্নি (১০),কমলা বেগম (৫২),মিনারা বেগম (৫০),অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০), তিথিবা বিশ্বাস (২),মাহিদা আক্তার (৬),সিরাজুল ইসলাম (৫৮),ঝর্ণা বেগম (৪৫)। অন্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
নৌকায় থাকা ১০ থেকে ১৫ জন বলেন, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় চম্পকনগর থেকে নৌকাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। চম্পকনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নৌপথে এটি ছিল সর্বশেষ নৌকা। নৌকাটি আকারে ছোট ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েছিলেন নৌকার মাঝি। যেখানে নৌকায় যাত্রীদের জুতা রাখা হয়, অতিরিক্ত যাত্রীর জন্য সেখানে যাত্রীরা বসেছিলেন। মনিপুর থেকেও যাত্রী তোলা হয়। অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে এবং সামনে থেকে ধাক্কা দেওয়ায় নৌকাটি ডুবে গেছে।
গতকাল (২৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চম্পকনগর ঘাট থেকে ১৫০ থেকে ২০০ জন যাত্রী নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উদ্দেশে রওনা করে নৌকাটি।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিতাস নদের উপজেলার লইছকা বিলে বালুবাহী একটি স্টিলের নৌকার সঙ্গে যাত্রীবাহী নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সে সময় যাত্রীবাহী নৌকাটির পেছনে আরেকটি বালুবাহী নৌকা ছিল। এটিও যাত্রীবাহী নৌকাটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীবাহী নৌকাটি উল্টে ডুবে যায়। সামনে থেকে ধাক্কা দেওয়া নৌকাটি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। নৌকার যাত্রীদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধারকাজে নামেন। খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
পরে সদর থানার পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। রাত ১২টা পর্যন্ত ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পানি থেকে লাশ উদ্ধার করে পাশের শেখ হাসিনা সড়কে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করছেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। স্থানীয় মানুষও উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। নৌকাডুবির ঘটনায় আহতদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল বিকেলে বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে জেলা সদরের উদ্দেশে যাত্রীবাহী নৌকাটি রওনা হয়েছিল। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপজেলার পত্তন ইউনিয়নে তিতাস নদ-সংলগ্ন লইছকা বিলে আসার পর দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে ডুবুরি দলের চারজন সদস্য কর্মস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে এবং আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।