হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিত এক ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক এবং ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনি নাকি আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন না! গতকাল দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তায় তামিম এ ঘোষণা দেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর দিন তামিমের এমন ঘোষণায় হতবাক লাল-সবুজের ক্রিকেটভক্তরা। কারণ তামিম দেশের তারকা ক্রিকেটারদের অন্যতম একজন। ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে চলেছেন দিনের পর দিন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শর্টভার্সন ক্রিকেটে তামিমের ছন্দপতন চোখে পড়ার মতো। ২০১৮ সালের পর থেকে গত পৌনে তিন বছরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। মূলত এ কারণেই তিনি নিজেকে বিশ্বকাপ দল থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তবে তার এ সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক? তা ভেবে দেখার বিষয়। যদিও এখনই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেননি ওয়ানডে অধিনায়ক।
ভিডিও বার্তায় তামিম জানান যে, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের জানিয়েছেন আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি থাকছেন না। মূলত ইনজুরির কারণে এবং নতুনদের সুযোগ দেয়ার জন্যই তামিম বিশ্বকাপে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তামিম বলেন, ‘ইনজুরি আমার মনে হয় না অত বড় সমস্যা। কারণ আমি আশা করি, বিশ্বকাপের আগেই ঠিক হয়ে যাবো। মূল যে বিষয়টা আমাকে ভাবিয়েছে, তা হলো… যেহেতু আমি সর্বশেষ ১৫-১৬টা টি-টোয়েন্টি খেলিনি এবং আমার জায়গায় যারা খেলছিল, আমার কাছে মনে হয় না, এটা তাদের প্রতি ন্যায়বিচার হতো, যদি আমি হঠাৎ করে এসে ওদের জায়গা নিয়ে নেই।’
তামিম আরো বলেন, ‘আমি জানি না, হয়তোবা আমি বিশ্বকাপের দলে থাকতাম। কিন্তু আমার মনে হয় না, এটা ফেয়ার হতো। তরুণ যারা এখন জাতীয় দলে ওপেন করছে, ওদের সুযোগ পাওয়া উচিত। কারণ তারা শেষ ১৫-১৬ ম্যাচ ধরে খেলছে। ওদের প্রস্তুতিও আমার চেয়ে ভালো হবে। পাশাপাশি আমি এটাও মনে করি, তারা দলকে আমার চেয়ে ভালো সার্ভিস দিতে পারবে। সম্ভবত এ বিশ্বকাপে আপনারা আমাকে দেখবেন না। আমি বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং নির্বাচকের কাছে আমার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। দলের জন্য সবসময় শুভকামনা।’
ভিডিও বার্তায় তামিম সাংবাদিকদের কাছে তিনি অনুরোধ করেন, তাকে কোনো ধরনের ফোন কল অথবা মেসেজ না দিতে। এ সিদ্ধান্ত তিনি পাকাপাকিভাবেই নিয়েছেন এবং এতেই অটল থাকবেন। ভিডিও বার্তার শেষ দিকে তিনি বলেন, ‘আরেকবার পরিষ্কার করে দেই, আমি অবসর নিচ্ছি না। কিন্তু সম্ভবত এ বিশ্বকাপটা আমার খেলা হবে না। আমার কাছে মনে হয় যে, এটাই যথাযথ সিদ্ধান্ত।
সবশেষ ২০২০ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন তামিম। এরপর কখনও ইনজুরি আবার কখনও ব্যক্তিগত কারণেই সরে দাঁড়িয়েছেন এই ফরম্যাট থেকে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ ১১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হয়নি তামিমের। কাল থেকে শুরু হওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পাঁচ ম্যাচসহ বিশ্বকাপের আগে মোট ১৬ ম্যাচ বাইরে থাকতে হচ্ছে তাকে।
এদিকে তামিমকে ছাড়াই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন নির্বাচকেরা। কাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষেই তা ঘোষণা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তামিম ঘোষণা দিলেন, তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন না! তার এই ভিডিও বার্তার পর আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেনি বিসিবি। তামিমের খালি জায়গায় অন্য কাউকে নিয়েই এখন ঘোষণা করা হবে।
মিরপুরস্থ বিসিবি কার্যালয়ে বোর্ড সভা শেষে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তা নিশ্চিত করেন, তামিমের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে ছাড়াই হবে অক্টোবর-নভেম্বরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল, ‘তামিম সিদ্ধান্ত জানানোর আগে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যেহেতু সে ঘোষণা দিয়েছে যে, সে থাকছে না। তবে বিশ্বকাপের পরও আমাদের অনেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আছে। আগামী বছর আরেকটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও আছে। আশা করি তামিম আবার টি-টোয়েন্টি দলে ফিরবে এবং আগামী বছর বিশ্বকাপে খেলবে।’ তামিমের বিশ্বকাপ না খেলার সিদ্ধান্তকে ‘সাহসী’ বলে উল্লেখ করে পাপন আরো বলেন, ‘চোটের কারণে তামিম অনেক দিন ধরেই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলছে না। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও খেলেনি। চলমান নিউজিল্যান্ড সিরিজেও খেলছে না। সে খেললেও খেলতে হতো চোট থেকে সরাসরি ফিরে।’
বিশ্বকাপে তামিম না থাকলেও বিসিবি বসের চোখে সে-ই দেশের ১ নম্বর ওপেনার, ‘আমার চোখে দেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। সেরা অধিনায়ক মশরাফি বিন মুর্তজা ও আমাদের দেশের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান।’