ক্রেতার কাছ থেকে কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব কষে ভ্যাট আদায় করেও সরকারি কোষাগারে একটি টাকাও জমা দেয় না দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ দোকান। এসব দোকান অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনই গ্রহণ করেনি। ভ্যাট প্রদানকারী ১২ শতাংশের ৮০ শতাংশই হিসাবের চেয়ে কম জমা দেয়। আদায়কৃত মোট ভ্যাটের প্রায় ৬০ শতাংশ দেশের বড় মাপের ১৫৭টি প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করে থাকে। লক্ষ্যমাত্রা বাড়লে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বাড়ে। রাজধানীর বাইরের দোকান মালিকদের সব সময়ে ভ্যাট প্রদানে অনীহা বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের গত তিন মাসের (মে-জুলাই) জরিপে এই হিসাব পাওয়া যায়। জরিপকালে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেনি, এমন দোকানকে তাত্ক্ষণিকভাবে নিবন্ধন প্রদান করা হয়েছে। হিসাবের চেয়ে কম ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে হিসাবমতো ভ্যাট পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট পরিশোধ না করলে হিসাব জব্দ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, ‘অনেক দোকান ভ্যাটযোগ্য হয়েও ভ্যাট পরিশোধ করছে না, নিবন্ধনই নেয়নি। অনেকে পরিশোধ করলেও হিসাবের চেয়ে কম দেয়। তার পরও কিছু সৎ এবং ভালো প্রতিষ্ঠান হিসাবমতো ভ্যাট পরিশোধের কারনেই এনবিআরের আয় হচ্ছে। ভ্যাট ফাঁকিবাজ দোকান চিহ্নিত করনে এনবিআর জরিপ চালাবে।’
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে জরিপ চালিয়ে গোয়েন্দারা দেখেছেন, বিক্রেতারা ভ্যাট যোগ করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে। বেশির ভাগ ক্রেতা তা না জেনেই পণ্যমূল্যের সঙ্গে ভ্যাট পরিশোধ করে থাকে। আদায়কৃত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে অনেক দোকানের মালিক নিজের পকেটে রেখে দেন। এনবিআর জনবলের অভাবে এসব ভ্যাট ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নিবন্ধিত ৩০ লাখ দোকান রয়েছে। সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ভালো-মন্দ সব জায়গায় আছে। এটা ঠিক অনেকে সাধারণ ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট নিয়ে সরকারকে দেয় না। আবার এটাও ঠিক ভালো ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেন বলেই সরকার ভ্যাট পায়।’
অন্যদিকে রাজধানীর সিটি সেন্টারের ১৯৮টি দোকানের মধ্যে ১০টি, ট্রপিক্যাল আলাউদ্দিন টাওয়ারের ৮৩টি দোকানের মধ্যে ৫০টি, আরএকে শপিং কমপ্লেক্সের ৩৩টি দোকানের মধ্যে ২৬টি এবং সুভাস্তু নজর ভ্যালির ৫২৬টি দোকানের মধ্যে ২৬টি অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেছে। সুভাস্তু নজর ভ্যালিতে ঢাকা উত্তর কমিশনারেট থেকে জরিপকালেই তাত্ক্ষণিকভাবে ৫০০ দোকানকে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন দিয়ে তা মার্কেটের নিচে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মোট আদায়কৃত ভ্যাটের ৬০ শতাংশ দিচ্ছে দেশের উল্লেখযোগ্য ১৫৩টি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সিরামিক, জ্বালানি, আবাসন, নির্মাণ, সিমেন্ট, মোবাইল ফোন খাতের ব্যবসা করছে।