রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয় চিত্রনায়িকা পরীমনির। আজ সোমবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী মজিবুর রহমান। শুনানির জন্য আগামী বুধবার (১৮ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিন আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর হাকিম (সিএমএম) রেজাউল করীম চৌধুরী বরাবর আজ পরীমনির জামিন আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানির জন্য বুধবার দিন নির্ধারণ করেছে আদালত।
এর আগে গত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পরীমনিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।
অপরদিকে, তাঁর আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ পরীমনির জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে পরীমনির জামিন আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরীমনি ‘ভারটিগো’ এবং ‘প্যানিক অ্যাটাক’-এর রোগী। তিনি দীর্ঘসময় পুলিশ কাস্টডিতে (হেফাজতে) অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হেফাজতে থাকাকালীন মামলা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়নি। জরুরি চিকিৎসার স্বার্থে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া আবশ্যক।
অপরদিকে, পরীমনিকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।
আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক উল্লেখ করেন, ‘মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আসামি শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনিকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে জানান। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি হবার আশংকা আছে। এমনকি পলাতক হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।’
সেখানে আরো বলা হয়, ‘রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বিষয়ে আসামি (পরীমনি) বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার অভিযোগের সঙ্গে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তদন্ত অব্যাহত আছে। মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে আটকে রাখা একান্ত প্রয়োজন।’
গত ৪ আগস্ট পরীমনিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করা হয় র্যাবের পক্ষ থেকে। তাঁর ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিংরুম, বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয় বলেও দাবি করা হয়। এরপর রাত ৮টা ১০ মিনিটে পরীমনিকে তাঁর বাসা থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮টা ৪৫ মিনিটে গাড়ি কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে পৌঁছে। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পরীমনি, রাজ ও তাঁদের দুই সহযোগীকে কালো একটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে বনানী থানায় রওনা দেয় র্যাবের একটি দল।
এরপর র্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও তাঁর সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলায় দায়ের করে৷ রাত ৮টা ২৪ মিনিটে পরীমনি ও তাঁর সহযোগীকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বনানী থানার মামলায় তাঁদের সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ সময় আসামিপক্ষে তাঁদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তাঁদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর পর ১০ আগস্ট পরীমনি ও তাঁর সহযোগী দীপুকে আদালতে হাজির করে ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। এ সময় আসামিপক্ষ রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। অন্যদিকে জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাঁদের দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুই দফায় রিমান্ড শেষ হলে গত ১৩ আগস্ট পরীমনি ও তাঁর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁদের জামিন আবেদন খারিজ করে। তাঁদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।