আগামীকাল রবিবার (২৯ আগস্ট) থেকে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের ওপর পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হচ্ছে। তার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দিয়াবাড়ি থেকে পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করেছে। মিরপুরের যে এলাকা দিয়ে উড়াল লাইনটি স্থাপন করা হয়েছে, তার আশপাশের বাড়ির বাসিন্দারা এই ট্রেন দেখে উৎফুল্ল। তারা ছবি ও ভিডিও তুলে ফেসবুকে শেয়ার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ক’দিন পর যে ট্রেনে চড়ে তারা দুঃসহ যানজটের অভিজ্ঞতা ভুলে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছবেন, সেটি প্রথম দেখার আনন্দটাই আলাদা। শুক্রবার সকালে মেট্রোরেল ৬টি বগি নিয়ে মিরপুর পর্যন্ত চারটি স্টেশনে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করে।
মেট্রোরেল প্রজেক্ট ম্যানেজার (সিপি-৮) এবিএম আরিফুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুক্রবার নিরাপদেই চলেছে মেট্রোরেল। কোন ধরনের সমস্যা হয়নি। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের উড়ালপথ কংক্রিটের দেয়ালবেষ্টিত। এ কারণে পথচারীরা মেট্রোরেল চলাচল দেখতে পাননি। তবে সংশ্লিষ্ট সড়কের পাশে উঁচু ভবন থেকে অনেকে এই ট্রেন চলাচল দেখতে পেয়েছেন। বিদ্যুতচালিত ট্রেন খুব ধীরে ধীরে চালানো হয় এবং রেলপথের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়কারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, ভায়াডাক্টের ওপরে ট্রেন পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। আগামীকাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভায়াডাক্টের ওপরে মেট্রোরেলের ট্রেন পরিচালনার জন্য যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতেই প্রস্তুতি চলছে। শনিবারের মধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দেশের প্রথম মেট্রোরেল হচ্ছে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। বর্তমানে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে এটি মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলছে। এটি পরে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, এখন পরীক্ষামূলক চললেও যাত্রী নেয়া হবে না। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হতে পারে। প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৮.৪৯ শতাংশ। ২০.১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৬.৫৬৬ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন শেষ হয়েছে। ১৭টি মেট্রোরেল স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলছে। দিয়াবাড়িতে ডিপোর ভেতরে রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপরে মূল রেলপথে ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করা হয়েছে। ১৫ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি মেট্রো ট্রেন সেট ঢাকার উত্তরাস্থ ডিপোতে এসে পৌঁছেছে। এগুলোর ১৯ ধরনের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। মেট্রোরেলের ট্রেন চালানো হবে বিদ্যুতের মাধ্যমে। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁওয়ের মধ্যে মেট্রো রেলপথের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে নয়টি স্টেশন। তার মধ্যে কমপক্ষে পাঁচটি স্টেশনের মধ্যে রেলপথের ভায়াডাক্টের ওপর ট্রেন পরিচালনা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও এ প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত থাকলেও নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের জুনের মধ্যেই পুরো মেট্রোরেলের কাজ শেষ করা হতে পারে বলে আশাবাদী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি ডিএমটিসিএল। এই প্রকল্প চালু হলে উত্তরা-মতিঝিল রুটে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার ও দিনে ৫ লাখ যাত্রী চলাচল করবে। মোট ১৬টি স্টেশনে থামবে ট্রেনগুলো। উত্তরা-মতিঝিল রুট ছাড়াও ঢাকার যানজট নিরসন এবং দ্রুত ও আরামদায়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে নতুন করে আরও পাঁচটি রুটে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে ১২৮ কিলোমিটারের নেটওয়ার্ক হবে মেট্রোরেলের।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেছেন, করোনা মোকাবেলা করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে। আমরা ভায়াডাক্টের ওপর মেট্রো ট্রেন পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ডিএমটিসিএলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তরা-কমলাপুর মেট্রোরেল প্রকল্পে প্রায় সাত হাজার বিদেশী কাজ করছেন। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে যুক্ত ৩২১ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ যাবত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮৬ জন।