রাজধানীতে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনে জরিমানা ও গ্রেপ্তারের রেকর্ড!

বুধবার (১৪ জুলাই) দুই দফায় টানা ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন শেষ হয় রাত ১২ টায়। ১ লা জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

সারাদেশের ন্যায় রাজধানীতেও পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন ছিল সেনাবাহিনী, বিজিবি। এই কঠোর লকডাউনে যারা নানান অজুহাতে বিধিনিষেধ অমান্য করে রাস্তায় বা বাড়ির বাহিরে বেরিয়েছিল তাদের গুনতে হয়েছে জরিমানা আবার কাউকে যেতে হয়েছে জেলে। বিধিনিষেধ অমান্য করে ছাড় পায়নি ব্যক্তি গাড়ি বা মোটরসাইকেল।

বুধবার (১৪ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য মতে জানা যায়, গত ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত  রাজধানীতে বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া, চায়ের দোকানসহ রাস্তায় আড্ডা দেয়ায় সর্বমোট ১১ হাজার ৮৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে বিনা প্রয়োজনে দোকানপাট খোলা, বাহিরে বসে আড্ডা দেয়ায় ৮ হাজার ৫৪০ জনকে এবং মেবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যারা বিনা প্রয়োজনে বের হয়েছেন এমন ২ হাজার ৯৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। টানা ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনে জরিমানা আদায় করা হয় ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৩৩০ টাকা । এর পাশাপাশি মটরসাইকেল এবং ব্যক্তিগত ৮১৩৯ টি গাড়িকে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৫ টাকা জরিমানা করা হয়।

 

সর্বাধিক গ্রেপ্তার করা হয় ৭ই জুলাই, ১ হাজার ১০২ জন এবং ৮ জুলাই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত জরিমানা করা হয় ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা এবং ট্রাফির জরিমানা সর্বোচ্চ করা হয় ৬ জুলাই ২৫ লাখ ২৯ হাজার ২৫ টাকা।

 

কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৫০ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ২১২ জন। ট্রাফিক মামলা ২৭৪ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫০ টাকা।

২ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩২০ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ২০৮ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার ৭০০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৬৮টি, যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৯০০ টাকা।

৩ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬২১ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ৩৪৬ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৭৬১টি, যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ১৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা।

৪ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬১৮ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ১৬১ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ৫৪ হাজার ৪৫০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৪৯৬টি, যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ১২ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা।

৫ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫০৯ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ২৮৭ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৫২৬ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ১২ লক্ষ ২৩ হাজার ৩০০ টাকা।

৬ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৬৭ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ৩০৫ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ২ লক্ষ ২৭ হাজার ৪৮০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ১০৮৭ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ২৫ লক্ষ ২৯ হাজার ২৫ টাকা।

৭ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১০২ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ২৪৫ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৯৮০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৮০৪ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ১৮ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা।

৮ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০৭৭ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ৩১৮ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ১৬ লক্ষ ৭৯০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৯৩৭ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ২১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা।

৯ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৮৫ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ১২৯ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৫০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৪১৪ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ৮ লক্ষ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা।

১০ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭৯১ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ২১২ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪৫০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৩৬১ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ৯ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা।

১১ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭০৮ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ১৮৪ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬৮০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ২৪৪ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ৫ লক্ষ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।

১২ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬৪০ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ১৬৮ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৭২৭ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ১৫ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা।

১৩ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৫২ জন। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গ্রেপ্তার ১১৯ জন। জরিমানা আদায় হয়েছে ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। ট্রাফিক মামলা ৬৯৬ টি যার বিপরীতে জরিমানা আদায় ১৪ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা।

শেষ দিন ১৪ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৬২ জন। ১০৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগ ৭৪৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।

 

উল্লেখ্য, কোভিড বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির দেশজুড়ে পুরোপুরি ‘শাটডাউনের’ সুপারিশের পর ২৮ জুন (সোমবার) থেকে কঠোর লকডাউনের কথা বলা হয়। পরে সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে এবং ১ জুলাই থেকে প্রথম দফা সাত দিন সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তীতে দ্বতীয় দফায় আরোও ৭ দিন বাড়িয়ে বুধবার (১৪ জুলাই) পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

আজ (১৪ জুলাই) কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ৪১তম অনলাইন সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কোরবানির পশুর হাট বন্ধসহ আরও ১৪ দিন কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করলেও  তা উপেক্ষা করে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দেয় সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *