বাস কন্ডাক্টরের ছেলে থেকে যেভাবে রাজ কুন্দ্রা হলেন কোটিপতি

পর্নো ভিডিও তৈরি এবং অ্যাপের মাধ্যমে সেগুলো সরবরাহ করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী শিল্পী শেঠির স্বামী ও ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রা।

গত মঙ্গলবার (২০ জুলাই) তাকে আদালতে হাজির করা হয়। মুম্বাই পুলিশ জানায় পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এমন খবরের পরে তোলপাড় সারা বলিউড পাড়া। পাশাপাশি ভারতীয় সিনেপ্রেমীরাও শিল্পার স্বামী ইতিহাস জানতে উঠে পড়ে লেগেছেন ।

রাজ কুন্দ্রা কীভাবে এতো বিত্তশালী হয়েছেন? পৈত্রিকভাবেই কি  সম্পদশালী? বলিউড অভিনেত্রী শিল্পার সঙ্গে কিভাবে তার পরিচয়? তার এতো সম্পদের পেছনে আর কি কি কালো অধ্যায় জড়িত?

প্রকৃতিগতভাবেই এসব প্রশ্ন উঠতে পারে।

ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার অতীত উঠে আসে, নিতান্তই এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন রাজ কুন্দ্রা। তার বাবা বালকৃষ্ণ এক সময় ব্রিটেনে ছোটখাটো একজন বাস কন্ডাক্টর হিসেবে কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তার বেতন দিয়েই চলত পুরো সংসার। অর্থাভাবে রাজ কুন্দ্রা কলেজের পাঠ শেষ করতে পারেননি।

আর সেই ব্যক্তি হঠাৎ ২০০৪ সালে সাকসেস ম্যাগাজিনে জায়গা করে নান তাও এশিয়ান বংশোদ্ভূত ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ১৯৮তম স্থানে। এই তালিকায় ২৯ বছর বয়সে উঠে আসা রাজ কুন্দ্রা ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি।

তার এই ব্যবসায়ী হওয়ার যাত্রাটা সহজ ছিল না অবশ্যই। মাত্র দেড় লাখ রুপি প্রাথমিক মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন রাজ। নেপালের পশমিনা শালই তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটায়।

১৯৯৪ সালের নেপাল ভ্রমণের সময় সেখান থেকে পশমিনা শাল নিয়ে ব্রিটেনে আসেন। বড় সড় সব ব্রিটিশ ফ্যাশন হাউসগুলোতে শালগুলো দেখান। এরপরই শুরু হয় ব্যবসা।

প্রথম বছরে ব্যবসায়ে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ করেছিলেন রাজ কুন্দ্রা। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

সামান্য বাস কন্ডাক্টারের ছেলে দ্রুতই হয়ে ওঠেন এক বিত্তশালী ব্যক্তি। শাল আমদানির ব্যবসায়ের পর হীরার ব্যবসায় হাত দেন তিনি। তার সফলতা সেখানেও ।

এর পর ইউক্রেন, রাশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের সঙ্গে খনিজ, রিয়েল এস্টেট এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবসায় জড়িত হন। এভাবেই ধারাবাহিক এক সাফল্যগাঁথা লিখতে থাকেন রাজ।

 

কিন্তু ভারতীয় পুলিশের চোখে তিনি অপরাধীর দৃষ্টিতে ছিলেন গত কয়েক বছর ধরে।

২০১২ সালে ভারতের জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন রাজ কুন্দ্রা। মামলায় তাকেও গ্রেফতার হতে হয়েছিল। রাজস্থান রয়্যালসে একটি অংশীদারিত্ব ছিল রাজের।

তখন থেকে রাজ ছিলেন পুলিশি নজরদারিতে । সম্প্রতি এক ভারতীও মডেল-অভিনেত্রীর অভিযোগের জের ধরে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসে।

পর্নোভিত্তিক চলচ্চিত্র তৈরির এক সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে মুখোশ উন্মোচন হয়েছে রাজ কুন্দ্রার।

এর কয়েক দিন পর বান্দ্রার অভিজাত পাড়ায় রাজ কুন্দ্রা-শিল্পা শেঠির বিলাসবহুল বাড়িতে প্রায় চার ঘণ্টার তল্লাশি চালালো মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। তারা পর্নোগ্রাফি মামলায় অভিযুক্ত রাজ কুন্দ্রাকেও সঙ্গে এনেছিল। যদিও পর্নো কাণ্ডে শিল্পা শেঠির যোগাযোগ আছে বলে মুম্বই পুলিশ মনে করছে না, তাও তারা শিল্পাকে জেরা করে শুক্রবার। রাজ কুন্দ্রার পুলিশি হেফাজত ২৭ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ নিত্যনতুন প্রমান সংগ্রহ করছে। হটশট এর বেশ কিছু ভিডিও তারা উদ্ধার করেছে। যেখানে মেয়েদের নগ্ন কিংবা অর্ধনগ্ন ভিডিওই শুধু নেই, পুরুষের সঙ্গে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও-ও আছে। পুলিশ এগুলি সব বাজেয়াপ্ত করেছে।

 

জানা গেছে ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই শুটগুলি করানো হত।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *